মীরা ও তার সাথে ঘটে যাওয়া এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা

avatar

মীরা ও তার সাথে ঘটে যাওয়া এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা

20210725_144725.jpg

আমি মীরার কথাগুলো মীরা হয়ে বলছি। আমি মীরা। এই মুহুতে আমি বসে যাচ্ছি ছয় তলার ছাদের উপর পানির ট্যাংকির ঠিক পাশে। পানির ট্যাংক এটি রাখা আছে ছাদের উপরে চারটি পিলার দিয়ে ছোট্ট করে আরেকটি ছাদ করা সেখানে। যেমন টা আমরা অনেক বিল্ডিং এর উপরেই দেখি। জায়গাটা বেশ মজার ছয় তলার ছাদ থেকে সাতটা সিঁড়ি উপরে , এর তিন দিক ছাদের পাশে পড়েছে আর এক দিকে কোনো ছাদ নেই। নিচে তাকালে সোজা নিচের রাস্তা দেখা যাই। পা ঝুলিয়ে বিন্দাস বসা যাই আর বাতাসের তো কোনো অভাব এই নেই। মফস্বল শহরে এই এলাকায় এত লম্বা বাড়ি আর নেই। আশেপাশের গুলো তিন চার তলাতেই সীমাবদ্ধ। প্রথম যেদিন এখানে এসে বসেছিলাম ভীষণ ভয় করছিলো তবে এখন আর করে না , অভ্যাস হয়ে গেছে।

আজ তিন তলায় ভীষণ হইচই হচ্ছে , কারা কারা যেন আসবে। তাতে অবশ্য আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই, যা ইচ্ছা হোক। আমাকে কেউ কিছু বলবেনা। প্রথমত আমার মা কিছুদিন আগে মারা গেছে আর এর ঠিক চারদিন পরেই বাসার কাজের মেয়েটা আমাকে দেখে ফেলেছে পা ঝুলিয়ে এখানে বসে থাকতে। ওর চোখে ভীষণ ভয় ঢুকেছে সেদিন থেকে।

আমি মীরা , আমার বয়স ১৩।
এই বয়সের মেয়েরা অনেক কিছুই বোঝে কিন্তু বলতে পারেনা ভয়ে। কেমন যেন হটাৎ করেই আমি অনেক বড় হয়ে গেলাম এই কদিনেই আর সাথে অনেক কিছু জানাও হলো। এই যেমন মুর্দা কি ভাবে ধোঁয়াতে হয় , তার নিয়ম কানুন। আর মেয়ে থাকলে তাকেও করতে হয় কিছু কাজ। যা আমি আমার মায়ের ক্ষেত্রে করেছিলাম।

কাজের মেয়েটা আমাকে যেদিন দেখলো আমি এভাবে এখানে বসে আছি , সেদিন অনেক আকুতি মিনতি করছিলো নিচে নামতে। ওর চোখে কেমন জানি একটা ভয় কাজ করছিলো। সে যাই হোক , আমি আগে এখানটাতে বসতাম এমনি এমনি , কাছ থেকে আকাশ দেখা যাই , গায়ে রাগী বাতাস অনুভব করা যাই , চুল গুলো ছেড়ে দিলে কেমন জানি এলোমেলো হয়ে উড়তে থাকে। দুপায়ের মাঝখান দিয়ে নিচে তাকালে কেমন যেন শরীরে একটা শিহরণ দিয়ে উঠে। এই ভালোলাগার অনুভূতি যেন নেশার মতো হয়ে গেছে। আর এখন আমি বসি রাতের আকাশে মাকে খুঁজতে। আকাশে থাকা হাজারো তারার মধ্যে হয়তো একটা হবে।

সবাই জানে আমার মায়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে , কিন্তু শুধু আমি জানি আমার মায়ের মৃত্যু কি ভাবে হয়েছে। আর এই জন্য এখন আমার বাবাও আমাকে ভয় পাই , এটা সত্যি বেশ মজার। আগে আমি বাবাকে ভয় পেতাম আর এখন বাবা আমাকে ভয় পাই। আজ কাল আমি যা কিছু করি না কেন সে আর আমাকে কিছুই বলে না।

ঘটনাটা সেটিন হটাৎ করেই ঘটেছিলো। সেদিন ছিল বুধবার , দুপুরের সময় , বাবা সেদিন তার দোকান থেকে একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলো। বাবা কখনো এমন সময় বাসায় আসে না। মা বাসার কাজ শেষ করে গিয়েছে গোসলে। আমি শুয়ে ছিলাম আমার ঘরে। তখনি কলিংবেল শব্দ। আমি শব্দ শুনে ইচ্ছা করেই উঠছিলাম না। ভাবলাম কে না কে এসেছে এমন সময় , শুয়ে থাকতে বেশ আরাম লাগছিলো। অনেক্ষন বেল বাজতে থাকে। অনেক্ষন পর বিরক্ত হয়ে আমি দরজার কাছে যেতেই মা গোসল শেষ করে এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার পর দেখি বাবা অগ্নিমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রথমেই একটা চিৎকার দিলো '' কোথায় ছিলে এতক্ষন ?'' মা উত্তর দিতে গিয়েও দিতে পারলোনা তার আগেই বাবা একটা চর মারলো মায়ের কান বরাবর। তারপর আরো কয়েকটা।

মা চর খাওয়ার পরেও কেমন যেন নত হয়ে রইলো। আর মায়ের নত হয়ে থাকা দেখে বাবার আরো রাগ উঠে গেলো , টেবিলের উপরে থাকা পোড়ামাটির তৈরী ফুলদানিটা দিয়ে মাথায় দিলো এক বাড়ি। অমনি একটা চিৎকার দিয়ে মা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আর বাবা রাগে গজ গজ করতে করতে মাকে ডিঙ্গিয়ে ঘরের ভিতরে চলে গেলো। পুরো দৃশ্যটা আমি নিজের ঘরের দরজায় দাড়িয়ে দেখলাম। আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিত। দুই হাতে নিজের মাথা চেপে বসে গেলাম আমার খাটে আর শব্দহীন কান্না করতে লাগলাম।

শুনতে পেলাম বাবা ডাকছে '' মীরা '' একটু এদিকে আয় , আমাকে এক গ্লাস পানি দিয়ে যা। আমি কাছে গেলাম দেখলাম মায়ের মাথার পিছন দিয়ে লাল রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। বাবার ডাকের উত্তরে কিছুই বললাম না কিছু করলামও না। শুধুই অবাক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বাবাও আমাকে আর কিছু না বলে মাকে কোলে করে নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে শুয়ে দিলো আর ফোন দিলো আমাদের এই এলাকার ডাক্তার চাচাকে। ফোন দেয়ার পর বাবা সেই ফুলদানিটা মাটি থেকে তুলে ঠিক করে রাখলো। আর মেঝেতে পরে থাকা রক্ত গুলো খুব যত্ন সহকারে মুছে ফেললো। মায়ের মাথার নিচে বড় একটা উড়না দিয়ে পেছিয়ে দিলো যাতে রক্ত গুলো ছড়িয়ে না যাই। এর মধ্যে ডাক্তার চাচা চলে আসলেন ও মাকে দেখে বললেন একি করেছেন ভাই , তারপরের কথা গুলো আমি আর শুনতে পাইনি , আস্তে আস্তে বলতে থাকে। তবে আমি বুঝে গিয়েছি , মা আর নেই।

তবে আমি একদিক দিয়ে খুশি হয়েছি কারণ মাকে আমি প্রতিদিন একটু একটু করে মরতে দেখিছি , তার চেয়ে এই ভালো একেবারেই চলে গেছে। এখন আমি দেখবো বাবা প্রতিনিয়ত ভয় নিয়ে কি ভাবে বেঁচে থাকে ........ সময় চলছে টিক টিক টিক টিক।

আমি কিন্তু আজও কাউকে কিচ্ছু বলিনি। ভাবছি কি করা যাই। পুলিশকে বলবো সে তো আরো বেশি ক্ষেপা। সে তো এসেই সেই ফুলদানির তদন্ত শুরু করবে আর সেখানে আমার হাতের ছাপও আছে। তারচেয়ে ভালো একটা কাজ করা যাক , বাবাকে দিয়ে কি করে সত্যটা বের করা যাই সেটাই ভেবে বের করতে হবে আমার।



0
0
0.000
0 comments